আমাদের প্রিয় গ্রাম — বৃহত্তর মুসলিম ব্লক
লেখকঃ- মোঃ আসিফ ইসলাম সাইফ
আমাদের গ্রামের নাম বৃহত্তর মুসলিম ব্লক। গ্রামটি রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার পৌরসভার ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ড এবং মারিশ্যা ইউনিয়নের ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডজুড়ে বিস্তৃত।
চারদিকে সবুজে মোড়া—প্রকৃতির অপরূপ সাজে সজ্জিত আমাদের এই গ্রাম। গাছপালা, খাল-বিল, পশুপাখির ডাক আর বিকেলের গোধূলি মিলেমিশে গ্রামটিকে যেন এক শান্তিময় নীড় করে তুলেছে।
জনসংখ্যা ও পেশার বৈচিত্র্যের দিক দিয়ে বৃহত্তর মুসলিম ব্লক বাঘাইছড়ি উপজেলার অন্যতম বৃহত্তম গ্রাম। এখানে প্রায় সাড়ে আটশত পরিবারের বসবাস, যা ১৭টি সমাজ বা পাড়ায় বিভক্ত। শিক্ষক, ডাক্তার, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, কৃষক, জেলে, ড্রাইভার, ব্যবসায়ী, দর্জি-কারিগর, নির্মাণ শ্রমিক, অটোরিকশা চালক, ছোট উদ্যোক্তা—বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এখানে harmoniously বসবাস করে আসছেন।
ভূ-প্রকৃতি অত্যন্ত মনোরম ও কৃষির জন্য উপযোগী। প্রায় পুরো গ্রামজুড়ে উর্বর জমি, যেখানে ধান, পাট, গম, ডাল, সরিষা, আখসহ নানা শস্য উৎপন্ন হয়। বাড়িঘরের চারপাশে ফলজ গাছ ও ছোট-বড় বাঁশঝাড় পরিবেশকে আরও শীতল ও প্রাণবন্ত করে তুলেছে। এখানকার বাতাসও মনোমুগ্ধকর ও নির্মল।
শিক্ষা ও প্রতিষ্ঠানঃ-
গ্রামের শিক্ষার হার অন্যান্য এলাকার তুলনায় বেশ উন্নত। এখানে রয়েছে— মুসলিম ব্লক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,আয়নামতি আজিজ পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,আবু সৈয়দ এম. হাশিম স্কুল অ্যান্ড কলেজ
এছাড়াও আছে ২টি মাদরাসা—দারুস সুন্নাহ তাহফিজুল কুরআন মাদরাসা এবং পশ্চিম মুসলিম ব্লক মহিলা মাদরাসা।
এই গ্রামের উল্লেখযোগ্য অর্জন হলো—অনেক শিক্ষার্থী দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা অর্জন করছে, যা গ্রামের শিক্ষার অগ্রগতির শক্তিশালী প্রমাণ।
ধর্মীয় গুরুত্বঃ-
ধর্মীয় দিক থেকেও গ্রামটি বিশেষ পরিচিত। এখানে প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয় রাঙ্গামাটি জেলার সর্ববৃহৎ ১টি ইসলামী মহা সম্মেলন এবং ২টি বার্ষিক ওয়াজ মাহফিল। এখানে রয়েছে— ৩টি জুমা মসজিদ,একাধিক পান্জেখানা এবং বাঘাইছড়ি উপজেলার একমাত্র মডেল মসজিদ।
মাদ্রাসার পাশে সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন একটি কবরস্থান রয়েছে, যা গ্রামের ধর্মীয় আবেগ ও ঐতিহ্যের প্রতীক।
যোগাযোগ ও বাজারব্যবস্থাঃ-
চৌমুহনী সদর থেকে মাত্র ২ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত হওয়ায় যাতায়াতব্যবস্থা বেশ উন্নত। গ্রামজুড়ে ছোট-বড় সব রাস্তা পাকা, আর রাস্তার দু’ধারে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে।
গ্রামের প্রাণকেন্দ্র "মুসলিম ব্লক বাজার"—যা প্রতিদিন জমজমাট থাকে। শুধু গ্রামবাসী নয়, আশপাশের লোকজনও এখানে নিত্যপ্রয়োজনীয় কেনাকাটার জন্য আসে।
স্বাস্থ্যসেবাঃ-
গ্রামের মানুষ নিকটবর্তী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, মুসলিম ব্লক কমিউনিটি ক্লিনিক ও তুলাবান কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে স্বাস্থ্যসেবা পেয়ে থাকে।
উৎপাদন ও জীবিকাঃ-
গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ কৃষিকাজে নিযুক্ত। কেউ কেউ সরকারি চাকরিজীবী। কৃষকরা অত্যন্ত পরিশ্রমী—জমি কখনো পতিত রাখেন না। সারা বছর ঋতুভিত্তিক নানা ফসল ফলিয়ে তারা গ্রামের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।
আমাদের কাছে আমাদের গ্রাম এক আদর্শ গ্রাম। প্রতিদিনই এটি উন্নতির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষার প্রতি গ্রামের ছেলে-মেয়েদের আগ্রহ উল্লেখযোগ্য; তারা দূরদূরান্তে গিয়ে পড়াশোনা করছে ভবিষ্যৎ গড়ার লক্ষ্যে। আমরা আমাদের গ্রাম নিয়ে গর্ব করি—গর্ব করি তার মানুষ, তার ইতিহাস, তার অগ্রগতি ও সম্ভাবনা নিয়ে।



Post a Comment